চট্টগ্রামে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বিদেশিএয়ারলাইনসের কার্যক্রম

Passenger Voice    |    ১০:১৯ এএম, ২০২৪-০৩-২৩


চট্টগ্রামে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বিদেশিএয়ারলাইনসের কার্যক্রম

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিমানযাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি অবকাঠামোগত সক্ষমতাও বাড়ছে। তবুও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মোট ১৪টি বিদেশি এয়ারলাইনস কোম্পানি বাণিজ্যিক কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়, যা আন্তর্জাতিক এভিয়েশন শিল্পে নেতিবাচক বার্তা বহন করছে।

বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে বিদেশি বিমান সরাসরি চালুর পর যাত্রীসংখ্যা বার্ষিক ছয় লাখ থেকে বেড়ে ১৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে ৯ লাখ ৬৮ হাজার যাত্রী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে, যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে আট শতাংশ বেশি। অপরদিকে আভ্যন্তরীণ গন্তব্যে প্রতিবছর যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে। বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে-ট্যাক্সিওয়ে শক্তিশালীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় এখন লাইটিং সিস্টেম এবং ড্রেনেজ উন্নয়নকাজ চলছে, সেগুলো শেষ হতে ডিসেম্বর নাগাদ সময় লাগবে। গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করেছে ভারতের স্পাইস জেট বিমান, কুয়েতের জাজিরা এয়ারওয়েজ এবং ওমানের ওমান এয়ার। ফলে চট্টগ্রাম-মাসকট রুটে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। এর আগে বিভিন্ন সময় বন্ধ হয়ে গেছে আরও ১১টি বিদেশি এয়ারলাইনস। এগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে থাই এয়ার, থাই স্মাইল এয়ার, কুয়েত এয়ার, ফুকেট এয়ার, ড্রাগন এয়ার, মালিন্দো এয়ার, রোটানা এয়ার, হিমালয়ান এয়ার, রাস আল কাইমা (আরএকে) এয়ার ও টাইগার এয়ারওয়েজ ও সিল্ক এয়ার বন্ধ হয়ে যায়।

ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায়ী আকবর একজন বলেন, জাজিরা ও ওমান এয়ার বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসীরা। গত দুই বছরে এয়ারওয়েজগুলো ঘিরে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ এয়ারলাইনসগুলোর সেবা বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের কুয়েত ও ওমানগামী প্রবাসী ও যাত্রীদের। এর প্রভাবে বাড়ছে অন্য এয়ারলাইনসগুলোর বিমানভাড়াও। অথচ কুয়েতের লো কস্ট ক্যারিয়ার জাজিরা এয়ারওয়েজ চট্টগ্রাম-কুয়েত-জেদ্দা রুটে যাত্রীর চাপ বাড়ায় সপ্তাহে ফ্লাইটসংখ্যা তিনটি থেকে বাড়িয়ে পাঁচটি করেছিল।

এয়ারলাইনস সংশ্লিষ্টরা বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে কাউন্টারের সংখ্যা কম, টার্মিনাল ভবনের জায়গা কম এবং বেল্টের সংখ্যা কম হওয়ায় লাগেজ সংগ্রহে সময় লাগে, অর্থাৎ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এই রুটে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট পরিচালনা গুটিয়ে নিচ্ছে, কিন্তু যাত্রীদের চাহিদা আছে।

ওমান এয়ারওয়েজের চট্টগ্রাম স্টেশনপ্রধান আসিফ চৌধুরী বলেন, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৮ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে ওমান এয়ারের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা থেকে যথারীতি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। শুধু নেটওয়ার্ক রি-রাউটিংয়ের কারণে এই রুটে ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলার মতো নেই।

এ বিষয়ে শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বলেন, আমাদের অবকাঠামোগত সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে রানওয়ের। এ রানওয়ে দিয়ে এখন ‘বোয়িং ৭৭৭’ কিংবা ‘বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ এবং ‘এয়ারবাস এ ৩২০’ নামতে পারে। ফলে এখানে রানওয়ের সমস্যা নেই। পাশাপাশি আমাদের যাত্রীসেবা টার্মিনাল ভবনের পরিসর আরও বাড়ানো হবে। এখন পাঁচটি বিমানের সক্ষমতার জায়গায় যদি ১৩টি বিমান নামে, তাহলে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তিনি আরও বলেন, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে না, বরং তারা অন্য রুটে ভালো ব্যবসা পাচ্ছে, তাই সেই রুটে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্ত হবে। এছাড়া আমার বিশ্বাস কয়েক মাস আবার জাজিরা এয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য আসবে। তবে এটা ঠিক প্রতিযোগিতা কমে গেলে টিকিটের দাম নিয়ে অস্থিরতা হয়। বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি। তবে আমাদের কাজ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা। কোনো এয়ারলাইনস ব্যবসা পরিচালনা করবে কি করবে না, তা তাদের সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক রুটে দুটি দেশিসহ মোট ছয়টি এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এগুলো হলো বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা, এয়ার অ্যারাবিয়া, সালাম এয়ার ও ফ্লাই দুবাই।